প্রকৃতির বিস্ময় সুন্দরবন

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। প্রায় ছয় হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এ সুন্দরবন ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ছয়বার তার রূপ বদলায়। খুব ভোরে এক রূপ, দুপুরে অন্যরূপ, পড়ন্ত বিকালে আরেক রূপ, সন্ধ্যায় সাজ নেয় ভিন্নরূপে। সুন্দরবনের কচিখালী সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ তো রয়েছেই। এ কারণেই দেশি-বিদেশি হাজারও পর্যটক এখানে ছুটে আসেন সৌন্দর্য উপভোগ করতে।সুন্দরবনের পুরোটাই যেন অজানা রূপ-রহস্য আর রোমাঞ্চে ভরা। বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনের বাসিন্দা ভয়ঙ্কর সুন্দর বেঙ্গল টাইগার কিংবা বিষধর সাপ শঙ্খচূড়। আরও আছে জলের বাসিন্দা ডলফিন, বিরল প্রজাতির কচ্ছপ, পাখ-পাখালির দল ও চিত্রা হরিণ।
সময় হলে ঘুরে যেতে পারেন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এ বনে। সময় কাটাতে পারেন হরিণ দেখে, বাঘ খুঁজে, বানর ও কুমিরের সাথে লুকোচুরি করে। কিংবা নির্জন বনের সৈকতে গোসল ও সাঁতার কেটে। এছাড়া মন ভরে দেখতে পারেন সুন্দরবনের নানা দর্শনীয় স্থান-করমজল, কটকা, কচিখালী, পক্ষীর চর, ডিমের চর, তিনকোনা, হারবাড়িয়া, কোকিলমোনি, হিরণপয়েন্ট, দুবলারচর ও আলোরকোল। মূলত এই স্পটগুলোর প্রতিই থাকে সুন্দরবন ঘুরতে আসা পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। ভাগ্য সহায় হলে হাঁটতে হাঁটতে বানর, হরিণ, গোসাপ, কাঁকড়া অথবা কুমিরের সাথে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্যও দেখতে পারেন।
খুলনা্র মংলা থেকে মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টায় যাওয়া যায় সুন্দরবনের করমজলে। এখানে বনবিভাগ কুমির প্রজনন খামার ও মিনি চিড়িয়াখানা তৈরি করেছে। কচিখালীতে আছে সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্যের হাতছানি। ভ্রমণ-পিপাসুদের জন্য কচিখালী হচ্ছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। এরপর কটকা ও হিরণপয়েন্ট। এই ৩টি পয়েন্টে মংলা থেকে ট্রলারে করে পৌঁছাতে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা সময় লাগে। কটকাতে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এই টাওয়ারে উঠে একনজরে দেখে নেয়া যায় অপূর্ব সুন্দর সুন্দরবনকে। এরচেয়ে একটু বেশি সময় নিয়ে পৌঁছানো যায় দুবলারচর ও আলোরকোল। আলোরকোল পর্যটকদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ।সূর্য উদয় ও অস্তের দৃশ্য দেখার জন্য ভ্রমণ-পিপাসুরা ভিড় জমায় এখানে। এখানে সূর্য যেন পানির ভেতর থেকে উঠে আবার পানিতেই ডুবে যায়। এ দৃশ্য দেখার জন্য সবাইকে হাতছানি দেয় আলারকোল।
দুবলারচরে গেলে দেখা যাবে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা অস্থায়ী জেলেপল্লি। হাজার হাজার জেলে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন এই চরে। প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এই সুন্দরবন ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৬ বার তার রূপ বদলায়। খুব ভোরে এক রূপ, দুপুরে অন্যরূপ, পড়ন্ত বিকেলে আরেক রূপ, সন্ধ্যায় সাজ নেয় ভিন্নরূপে। মধ্য ও গভীর রাতে সৌন্দর্য আরেক রকম। আর যদি চাঁদনি রাত হয়, তবে তো কথাই নেই। এর সব ক’টি রূপ আপনাকে দেখতে হলে অবশ্যই একটু সময় নিয়ে আসতে হবে।
সুন্দরবনে বর্তমানে প্রায় সাড়ে চারশ’ ডোরাকাটা বাঘ বা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ও ত্রিশ হাজারেরও বেশি চিত্রা হরিণের বসবাস। এ ছাড়া মায়া হরিণ, বন্য শূকর, বানর, গুঁই সাপ, ভোঁদড়, ডলফিন, লোনাপানির কুমির, কিং কোবরা, বেঙ্গল কোবরা, শঙ্খচূড়, অজগর ইত্যাদি বন্যপ্রাণীর দেখা মেলে সুন্দরবনে।
সুন্দরবনে প্রায় ৩৩০ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুন্দরী, কেওড়া, পশুর, ধুন্দল, আমুর, গরান, গর্জন, খোলশী, বলা, হেতাল, গোলপাতা, টাইগার ফার্ন, হারগোজা ইত্যাদি।
স্থানীয় ও পরিযায়ী মিলে সুন্দরবনে প্রায় ২৭০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এর মধ্যে বড় সাদা বক, সি ঈগল, বাজ, মাস্ক ফিঙ্কফুট, বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙা, ফিঙে, সুঁইচোরা, কাঠঠোকরা, বন মোরগ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া প্রায় চারশ’ রকম মাছ পাওয়া যায় সুন্দরবন এলাকায়।
source: sundarban tour
(1076)